ডা: আসিফ ইকবাল , ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিষ্ট

no-more-antibiotics

বসন্ত এসে গেছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে নানান রোগ জীবাণু। কিন্তু জানেন কি জ্বর আসলে কোনও অসুখ নয়, উপসর্গ মাত্র। বাইরের কোনও রোগ জীবাণু বা শরীরের অভ্যন্তরের যে কোনও বিজাতীয় ঘটনা ঘটলে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। বিভিন্ন সংক্রমণের  পাশাপাশি অনেক সময় জটিল রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও জ্বর হতে পারে। এদিকে কোভিডের অতিমারির পর জ্বর হলেই কোভিডের ভয় গা ছমছম করে। তবে কোভিড ভাইরাস নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। সিজন চেঞ্জের এই সময়  ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ বেড়ে যায়। এছাড়া ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি জ্বর, ইউরিন ইনফেকশন, টনসিলাইটিস, শ্বাসনালীর সংক্রমণ, ফুসফুসের প্রদাহ কিংবা নিউমোনিয় অথবা মেনিনজাইটিসের  প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও জ্বর হতে পারে। আবার টিউবারকুলোসিস, গাউট,  রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, বা ক্যানসার হলে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে নাগাড়ে জ্বর হতে পারে।

রক্ত পরীক্ষা জরুরি:

যদিও এই সময়টায় সিজন চেঞ্জের জন্যে ভাইরাল ফিভার বেশি হচ্ছে, তাই জ্বর হলে রক্ত পরীক্ষা  করিয়ে নেওয়া উচিৎ। বিশেষ করে জ্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে যদি রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল না হয়  রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরী। রক্তে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার জীবাণু আছে কীনা টেস্ট করানোর সঙ্গে সঙ্গে প্লেটলেট কাউন্ট করিয়ে নেওয়া দরকার। প্রয়োজন পড়লে ইউরিন টেস্টও করাতে হতে পারে।

জ্বর বাড়তে দেওয়া ঠিক নয়:

শরীরের তাপমাত্রা বেশি বেড়ে গেলে নানান সমস্যা হতে পারে। বিশেষত বাচ্চাদের জ্বর বাড়লে তড়কা অর্থাৎ কনভালশন হতে পারে। তাই ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর হলেই বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল খাওয়ানো উচিৎ। অন্যান্য কোনও ক্রনিক অসুখ না থাকলে একজন স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক মানুষ এক গ্রাম প্যারাসিটামল খেলে জ্বর নেমে যায়। দিনে তিন বার পর্যন্ত এই মাত্রায় জ্বরের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। আর জ্বর বাড়লে মাথায় জলপটি দেবার যে রীতি আছে তাও মেনে চলতে হবে। জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে  গেলে মাথা ধুইয়ে সমস্ত শরীর স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া দরকার। বাচ্চাদের জন্যেও একই নিয়ম।

ইচ্ছেমত অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না:

সত্যি কথা বলতে কী ভাইরাল জ্বরের একমাত্র ওষুধ বিশ্রাম আর পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও লিক্যুইড ডায়েট। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা জ্বর হলে নিজেদের ইচ্ছে মত ওভার দ্য কাউন্টার অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে পরবর্তী কালে ওষুধ খেলেও কিন্তু রোগ সারবে না। তাই জ্বর হলে জ্বর কমানোর ওষুধ ছাড়া আর কোনও ওষুধ খাবার দরকার আছে কীনা তা ডাক্তারবাবুকে ঠিক করতে দিন।

জ্বরেও ডিহাইড্রেশন হয়  :

শুধু ডায়রিয়া হলেই ডিহাইড্রেশন হয় তা নয় জ্বর হলেও ডিহাইড্রেশন হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি  থাকে। তাই জ্বরের রোগীকে ঘন ঘন জল, ডাবের জল, স্যুপ, গোটা ফল বা বাড়িতে তৈরি ফলের রস খাওয়াতে হবে। জ্বরের আর এক ওষুধ হল বিশ্রাম। রোদ্দুরে ঘোরাঘুরি করলে বা বেশি ধকল নিলে জ্বর বাড়ে। তাই চেষ্টা করতে হবে জ্বর হলে দিন দুয়েক একটু বিশ্রাম নেওয়া। জ্বরের রোগীর থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চললে ভালো হয়।

জ্বরকে জব্দ করে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।