ডা: আসিফ ইকবাল, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিষ্ট,

ডিজিটাল বিশ্বের সব থেকে বড় সন্ত্রাসবাদীর নাম দূষণ। এই ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের সৃষ্টিকর্তা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। প্রবল গরম, ভয়ানক ঘূর্নিঝড় অথবা পাহাড় ধ্বসে যাবার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়াও আমাদের নানান শারীরিক অসুস্থতার পেছনে আছে দূষণ নামক ভয়ংকর উগ্রপন্থী। শুধুমাত্র দূষণের কারণে কলকাতা, দিল্লি সহ বেশিরভাগ শহর মফঃস্বলের প্রায় ৫০ % মানুষ ক্রনিক অ্যালার্জিজনিত সর্দি কাশিতে ভুগছেন। এর থেকে বাড়ছে হাঁপানির বা অ্যাজমার প্রকোপ। বিশেষ করে ঋতুপরিবর্তনের এই সময়টায় বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে অ্যালার্জিজনিত হাঁচি, কাশি, ত্বকের সমস্যার প্রকোপ বাড়ছে ।

মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দিলে টিবি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে

শহরাঞ্চলের বাতাসে মিশে থাকা পার্টিক্যুলেট ম্যাটার ও নানান ভাসমান কণার উপস্থিতিতে বাড়ছে এআর অর্থাৎ অ্যালার্জি রাইনাইটিসের ঝুঁকি। বাতাসে ভেসে থাকা পার্টিক্যুলেট ম্যাটারের সংস্পর্শে নাক ও শ্বাসনালীতে টাইপ -১ হাইপার সেনসিটিভিটির ফলে নাগাড়ে হাঁচি, সর্দি, কাশি ও পরবর্তীকালে ব্রঙ্কিয়াল হাইপার রেসপন্সিভনেস থেকে হাঁপানি ও সিওপিডির মত জটিল সমস্যার ঝুঁকি থাকে।

সিনিয়র সিটিজেনদের সুস্থ রাখতে টিকা দেওয়া জরুরি

প্রত্যকে বছর বিশ্বের ৭০ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন স্রেফ দূষিত পরিবেশের কারণে। শুধু যে রাস্তার গাড়ির ধোঁয়া ধুলোয় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি তা নয়, হাউসহোল্ড পলিউশন অর্থাৎ রান্নার আগুন ধোঁয়া, ফোড়নের ঝাঁঝ আর মশা অথবা কীটনাশক ধুপ ও স্প্রে এবং রুম ফ্রেশনার থেকে আমাদের অন্দরমহলও দূষিত হয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছেন ঘরের মধ্যের দূষণের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে শিশু ও বয়স্কদের মৃত্যুর হার ক্রমশ বাড়ছে। হাউস হোল্ড এয়ার পলিউশন থেকে এশিয়া ও আফ্রিকার প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ প্রত্যেক বছর মারা পড়ছেন। বাতাসে ভাসমান কণা ছাড়াও আরও নানান কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। নানান ধরণের রাসায়ানিক (কসমেটিক্স যেমন লিপস্টিক, হেয়ার ডাই, ক্রিম, লোশোন ইত্যাদি) কিছু খাবারে, বিভিন্ন পোষ্য প্রাণীর লোম এমনকী ওষুধ থেকেও অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকে। বিভিন্ন কারণে স্কিনে অ্যালার্জি হতে পারে। কিছু কেমিক্যাল বা মেটালের সংস্পর্শে হয় কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। কোনো কসমেটিক্স বা সাবান অথবা বাজির মসলার সংস্পর্শে ত্বকে ইরিটেশন হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার মশা, পিঁপড়ে বা কোনো পোকার কামড় থেকে ইনসেক্ট বাইটিং অ্যালার্জি হবার সম্ভাবনা থাকে।

আর্টিকেরিয়া অর্থাৎ অ্যালার্জির সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক ততোটা ঘনিষ্ঠ নয়, যতটা সবাই ভাবে। পাঁচ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাবার এই সমস্যা ডেকে আনতে পারে। খাবারে অ্যালার্জি সন্দেহ হলে ওরাল ফুড চ্যালেঞ্জ টেস্ট নামে এক বিশেষ পরীক্ষার সাহায্যে অপরাধী খাবারটিকে সনাক্ত করে তারপরই খাবার বন্ধ করা হয়। অনেক সময় ওষুধ থেকে অ্যালার্জি হলে শ্বাসনালী ফুলে গিয়ে মারাত্মক অবস্থা হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা না করালে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল।