ডা: আসিফ ইকবাল, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিষ্ট,

সদ্যোজাতের টিবির টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাও টিবি বা যক্ষার প্রকোপ কমছে না। বরং ওষুধে কাজ হচ্ছে না, রোগ বাড়ছে আপন গতিতে। এসব সমস্যা নিজেদেরই ডেকে আনা। টিবির ওষুধ খাবার পর অনেকেই আপাত ভাবে সুস্থ হয়ে গেলে মাঝপথে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। আবার অন্যদিকে টিবি আক্রান্ত হলে দিনের পর দিন বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকেন অথবা অন্য অবৈজ্ঞানিক প্যাথির সাহায্য নিয়ে রোগ বাড়িয়ে তোলেন। এই সব কারণে বাড়ছে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারক্যুলোসিস।  এই মুহুর্তে আমাদের দেশের মোট যক্ষা রোগীদের প্রায় চার শতাংশ মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট (এমডিআর টিবি)।

সিনিয়র সিটিজেনদের সুস্থ রাখতে টিকা দেওয়া জরুরি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মত ২০১৬ সালে আমাদের দেশে মোট যক্ষা আক্রান্তের সংখ্যা ২.৭৯ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৭ লক্ষ ৯০ হাজার। এদের মধ্যে প্রতি বছর (২০০৬ – ২০০১৪ সাল পর্যন্ত)  প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষায় জানা গেছে যে আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০% টিবির জীবাণু বহন করছেন। কিন্তু এঁদের বেশিরভাগ মানুষের অসুখটা নেই। মহিলা ও শিশুদের মধ্যে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। আসলে বাড়িতে এই ধরণের রোগী থাকলে তাঁর থেকে সকলের অজান্তে অসুখটা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।

জন্মের পর বাধ্যতামূলক ভাবে যক্ষার টিকা দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু তার কার্যকারিতা থাকে ছয় বছর পর্যন্ত। তাই ছয় বছর পেরিয়ে যাবার পর বাচ্চাদের টিবির ঝুঁকি থাকে। যক্ষার চিকিৎসায় সাধারণত যে দুটি সব থেকে কার্যকর ওষুধ ব্যবহারে করা হয় সেগুলি হল –  Isoniazid, Rifampicin। যখন টিবির চিকিৎসায় এই দুটি ওষুধ কাজ করে না তাকেই বলে এমডিআর টিবি। এখন একটা প্রশ্ন উঠতে পারে সাধারণ টিবির সঙ্গে এমডিআর টিবির তফাৎ বোঝবার উপায় কী। এর লক্ষ্মণ সাধারণ টিবির মতোই। নাগাড়ে ৩ সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে কাশি, লাগাতার অল্প অল্প জ্বর, বুকে ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, কফের সঙ্গে রক্ত বেরোন, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া ও সামগ্রিক দূর্বলতা। চিকিৎসক যদি মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি সন্দেহ করেন তবে রোগীকে বিশেষ কয়েকটি টেস্ট করার পরামর্শ দেন। রোগীর কফ নিয়ে জিন এক্সপার্ট ও কালচার ও ড্রাগ সাসেপ্টিবিলিটি টেস্ট করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এই পরোক্ষার সাহায্যে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়।

Ventilators can Save from Severe Breathing Problems

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রত্যেক বছর বিশ্বের ১৪ লক্ষ মানুষ টিবির কারণে মারা যান। এদের সিংহ ভাগই মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির শিকার। টিবি ধরা পড়ার পর হুর (WHO) নির্দেশিকা মেনে নির্দিষ্ট ওষুধের মাত্রা না নিলে এমআরডি টিবির ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া অনেকেই সাময়িক ভাবে সুস্থ হয়ে গেছেন মনে করে ওষুধের ডোজ কমিয়ে দেন অথবা ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন এবং বাড়িতে কোনও এমআরডি টিবির রোগী থাকলে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। তাও রোগীকে দ্রুত সণাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিবির বাড়বাড়ন্ত রুখে দেওয়া যায়। ২০১৬ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট রোগীদের জন্যে ৯ – ১১ মাসের শর্টার রেজিমেন পদ্ধতি অনুমোদন করেছেন। যদি মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির রোগীদের Isoniazid, Rifampicin দুটি ওষুধেই রেজিস্ট্যান্ট থাকে তাহলে ২০ – ২৪ মাসের চিকিৎসার আওতায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বেডাক্যুইলিন এবং ডেলামেনিড নামে দুটি অত্যাধুনিক ওষুধের সাহায্য নিয়ে রোগ সারানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এর জন্য টানা চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা আবশ্যক।