ডা: আসিফ ইকবাল, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিষ্ট,
আমাদের দেশের শহরাঞ্চলে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড রিসার্চ (এনসিডিআইআর) ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের ৫৮ টি ক্যানসার হাসপাতালের রোগীদের ওপর দীর্ঘ ৫ বছর সমীক্ষা করে দেখেছেন আমাদের দেশের প্রতি ৪ জন মানুষের ১ জন ক্যানসারে আক্রান্ত।
শহর অঞ্চলের পুরুষরা সব থেকে বেশি ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ধূমপানে আসক্তি ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম কারণ। এছাড়া রেডিয়েশন থেকেও লাং ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। স্টেজ -১ এ ক্যানসার ফুসফুসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। স্টেজ ২ তে ফুসফুস ও কাছাকাছি লিম্ফ নোডে ক্যানসার পৌছে যায়, কিন্তু ফুসফুসের বাইরে যায় না। স্টেজ থ্রি তে ফুসফুসের বাইরের দেওয়ালের লিম্ফ নোডে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে। আর স্টেজ ৪ এ দুটি ফুসফুস সহ শরীরের অন্যান্য অন্যান্য অংশেও রোগ ছড়ায়। স্টেজ ১ বা স্টেজ ২ এ ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসা করে তুলনামূলক ভাল ফল পাওয়া যায়। । ফুসফুসের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ কাশি। বিশেষ করে যারা ধূমপায়ী, বংশে এই অসুখের ইতিহাস আছে বা পরোক্ষ ধূমপানের মধ্যে থাকেন তাঁদের চিকিসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং এসব তথ্য জানাতে হবে।
যে সব লক্ষণ দেখলে ফুসফুসের ক্যানসারের ব্যাপারে সন্দেহ করতে হবে সেগুলি হল –
- · কাশি শুরু হয়েছে, কিছুতেই কমছে না , লাগাতার কাশির দমক চলছে,
- · কাশির সঙ্গে সামান্য হলেও রক্ত উঠছে,
- · বুকে ব্যথা, নাগাড়ে ব্যথা থেকে যেতে পারে,
- · মাঝে মাঝে ফুসফুসের সংক্রমণ হয়ে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসের সম্ভাবনা,
- · শ্বাসকষ্ট,
- · মাথার যন্ত্রণা,
- · কোনও কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া,
- · গলা ধরে যাওয়া বা গলার স্বর বদলে যাওয়া,
- · বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ,
- · খিদে কমে যাওয়া,
- · খাবার গিলে খেতে অসুবিধে হওয়া,
- · সারাক্ষণ ঝিমিয়ে থাকা
- · হাড়ে ব্যথা,
সাধারণত এই ধরণের উপসর্গ হলে (কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোন ছাড়া) বেশিরভাগ মানুষই গা করেন না। যখনই দুএকটি উপসর্গ দেখা যাবে এবং তিনি যদি স্মোকার হন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে একটা চেস্ট এক্স রে করিয়ে নেওয়া উচিৎ। দরকার মত সিটি স্ক্যান, এফএনএসি বা বায়োপ্সি করতে হতে পারে। রোগের স্টেজিং অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসা একটা নির্দিষ্ট প্রোটকল মেনে করা হয়। আমাদের দেশেও সেই একই গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা করা হয়। ছোট টিউমারের ক্ষেত্রে সার্জারি করা যেতে পারে। বড় টিউমার ও ক্যানসার ছড়িয়ে গেলে কেমো থেরাপি ও রেডিওথেরাপির সাহায্য নেওয়া হয়। অ্যাডভান্সড লাং ক্যানসারের ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি করে কিছুটা ভাল ফল পাওয়া যায়।